বিশেষ সংবাদদাতা:
লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ভারতের অন্য অংশের সঙ্গে সোমবার খুলে যায় মদের দোকান। এদিন সকাল থেকেই কলকাতার বিভিন্ন মদের দোকানের সামনে থিকথিকে ভিড় জমে যায়। ভিড় সামলাতে বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়। রাজ্যের অন্য অংশেরও চেহারা ছিল কম–বেশি একই রকম।
এদিকে, মদের দোকান খোলার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বেশি উদারতা দেখানোর অভিযোগ করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকারের কাছে টাকার অভাব দেখা দিয়েছে। তাই মদের দোকান খুলে সেই অভাব মেটাতে চাইছে। যাঁরা মদ কিনতে দোকানে আসছেন, তাঁরা কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না, বরং পরস্পরের গা ঘেঁষেই সকলে দাঁড়াচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মদের দোকান খোলার অনুমতি দিলেও বেশ কিছু শর্ত দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্দেশিকাও জারি করা হয়। সেই অনুযায়ী, কোনও মদের দোকানের সামনেই পাঁচজনের বেশি ভিড় করা যাবে না। তা ছাড়া ক্রেতাদের একজন থেকে অন্যজনের দূরত্ব থাকতে হবে কমপক্ষে ছ’ফুট। কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ মদের দোকানেই এই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
কালীঘাটের দমকল কেন্দ্রের কাছে থাকা একটি দোকানের সামনে মদ কিনতে জড়ো হন কয়েকশো মানুষ। উপস্থিত ক্রেতাদের মধ্যে সরকার নির্দেশিত নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে ছুটে আসতে হয় কালীঘাট থানার পুলিশকে। ভিড় সরাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষে পুলিশ চালায়। তাতেও ভিড় সরানো যায়নি। তখন দোকানের মালিককেই পুলিশের তরফে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই ছবি দেখা যায় দক্ষিণ কলকাতার অনেক জায়গায়। ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারের মদের দোকানেও বেশ ভিড় হয়। সল্টলেকের একটি মদের দোকানে ক্রেতাদের লাইন ৫ কিমি দীর্ঘ হয় বলে জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি বেহালা, হরিদেবপুর, টালিগঞ্জ, যাদবপুরেও মদের দোকানগুলিতে বেশ ভিড় হতে দেখা যায়। এর মধ্যে একটি অন্য রকম ঘটনা ঘটে বরানগরে। সেখানে মদের দোকানে ভিড় দেখে আচমকাই খেপে যান স্থানীয় কিছু মহিলা। তাঁদের কয়েকজন এতটাই রেগে যান যে, মদের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের বাঁশ নিয়ে তাড়া করেন। এ ছাড়া রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু জায়গায়ও মদের দোকানগুলিতে ভিড় হয়। ক্রেতাদের মধ্যে অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না বলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া গিয়েছে।
তবে মদের দোকানে ভিড় দেখে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকারও। ১৫ দফা নিয়মের কথা জানিয়ে রাজ্যের আবগারি দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনও কন্টেইনমেন্ট জোনে দোকান খোলা যাবে না।
বাড়তি ভিড় আটকাতে দোকানের সামনে ভলান্টিয়ার নিযুক্ত করতে হবে। কাউকে একসঙ্গে দু’বোতলের বেশি মদ বিক্রি করা যাবে না। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্তই দোকান খোলা যাবে। সিল করা মদের বোতলই বিক্রি করা যাবে। মাস্ক পরে না এলে কাউকে মদ বিক্রি করা যাবে না।